ডা. এনাম আরও জানান, ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরে একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ২০ থেকে ৩৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়ে পটুয়াখালী, ভোলা ও নোয়াখালী জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার উপর আছড়ে পড়েছিল। সেই ঝড়ে ১০ লাখের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিলো।
সেই সময়টাতে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পরপরই তিনি নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ রেখে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন ও জনগণের পাশে দাঁড়ান।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তিনি তুলে ধরেন, ঘূর্ণিঝড় থেকে মানুষকে রক্ষায় পাকিস্তানী সরকারের অবজ্ঞা ও অবহেলার অসংখ্য প্রমাণ।
তাঁর এই ভূমিকায় নড়েচড়ে বসে বিশ্ব। ক্ষণিকের জন্য হলেও স্তম্ভিত হয়ে পড়ে গোটা বিশ্ব। একটি ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়ার খবর মানুষের অন্তরকে কাপিঁয়ে দেয়।
বঙ্গবন্ধুর সেই ভূমিকায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ একটি বিশেষ অধিবেশন আহবান করে এবং সর্বসম্মতিক্রমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লীগ অব রেড ক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে দায়িত্ব অর্পণ করে।
তখন থেকেই দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস ব্যবস্থাপনাকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের গুরুত্ব উপলব্ধি করে উপকুলীয় অঞ্চলের মানুষদের রক্ষায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ জাতির পিতা তাঁর জন্মদিনে হাতিয়ার মৌলভীর চরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রথম মুজিব কিল্লা (সাইক্লোন সেল্টার সেন্টার) নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এভাবে
উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প সময়ের ব্যবধানে ১৩৭ টি মুজিব কিল্লা নির্মাণ করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু বললেন, ভিনদেশি কোন সংস্থার অনিশ্চিত আর্থিক সহযোগিতার উপর নির্ভরশীল না থেকে বরং নিজেদের শক্তি ও সামর্থকে দুর্যোগ মোকাবেলায় নিয়োজিত করতে হবে। ১৯৭৩ সালের ২৮ জুলাই তারিখে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিলেন বঙ্গবন্ধু। অনুমোদন দিলেন যে, সাইক্লোন প্রিপেয়ার্ডনেস প্রোগ্রামের যাবতীয় খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করবে এবং এই সংগঠনটি বাংলাদেশ সরকার ও বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির যৌথ ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে। পাশাপাশি একটি ওয়ারলেসের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবকদের সাথে কথা বলেন জাতির পিতা। গড়ে তোলেন বিশাল এক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী সিপিপি।
সেই ঘূর্ণিঝড় প্রস্ততি কর্মসূচিতেই নারীর ক্ষমতায়নে উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশকে গৌরবময় পদক দিচ্ছে জাতিসংঘ।
দুর্যোগ মোকাবেলার পথিকৃত ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। যার দূরদর্শী নেতৃত্ব আর আদর্শ আমাদের দেখিয়েছে দুর্যোগ মোকাবেলার পথ আর তারঁই সুযোগ্য কন্যা মানবতার জননী, জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে উজ্জীবিত বাংলাদেশ আজ দুর্যোগের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে রোল মডেল।
সময় জার্নাল/ইএইচ